খুলনা, বাংলাদেশ | ১৬ মাঘ, ১৪৩১ | ৩০ জানুয়ারি, ২০২৫

Breaking News

  জামালপুরে ট্রাকচাপায় আটোরিকশার ৫ যাত্রী নিহত
  শাবান মাসের চাঁদ দেখা যায়নি, শবে বরাত ১৪ ফেব্রুয়ারি
  দুর্নী‌তি মামলায় খুলনা ২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মিজানুর রহমান মিজানকে ৮ বছরের কারাদণ্ড ও এক কোটি টাকা জরিমানা করেছে ঢাকার বিশেষ আদালত

স্ত্রী হত্যায় পুলিশ সদস্যের মৃত্যুদন্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক

স্ত্রী হত্যার দায়ে খুলনায় এক পুলিশ সদস্যকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছেন আদালত। একইসাথে তাকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। সাজাপ্রাপ্ত আসামি হলেন কনস্টেবল লিটন কুমার দেবনাথ ওরফে সাহারিয়ার কবির লিটন (কং নং ৫৯৬)। তিনি খাগড়াছড়ি জেলার রামগড় উপজেলার ১ নং ওয়ার্ড পৌরসভার জনৈক অভিলাশ দেবনাথের ছেলে। রায় ঘোষণার সময়ে তিনি আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

বুধরবার (২৯ জানুয়ারি) খুলনার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক মো: কেরামত আলী এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আলফাজ হোসেন শেখ।

আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের ২ মার্চ বিকেল পৌনে ৪ টার দিকে রূপসা উপজেলার শিয়ালী পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এস আই ফিরোজ ওই এলাকাায় টহল দেওয়ার সময়ে লোকমুখে জানতে পারেন উপজেলার ডোবা গ্রামস্থ জনৈক অশোক অধিকারের বাড়ির পেছনে অজ্ঞাতনামা এক মহিলার মরদেহ পড়ে আছে। এমন সংবাদ পেয়ে তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ঘটনাস্থলে গিয়ে তিনি মরদেহ উদ্বার করেন। এ ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে রূপসা থানায় অজ্ঞাত আসামিদের নামে একটি মামলা দায়ের করেন।

আদালত সূত্র আরও জানায়, কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার চিরিংগা কোচপাড়া এলাকার সামসুল আলমের কন্যা আরজু আক্তারকে প্রেম নিবেদনসহ বিয়ের প্রস্তাব দেয় পুলিশ সদস্য লিটন কুমার। লিটন কুমার অন্য ধর্মালম্বী ও দু’ সন্তানের জনক হওয়ায় আরজু বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখান করে। কিন্তু পুলিশ সদস্য তাকে বিভিন্নভাবে প্রলোভন দেখায়। পরে আরজু আক্তারসহ পরিবারের সদস্যদেরকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয় ওই পুলিশ সদস্য। হুমকির পর পুলিশ সদস্যকে বিয়ে করতে রাজি হয়।

২০১৯ সালের ১ জানুয়ারী এফিডেভিট করে লিটন নাম পরিবর্তন করে আরজুকে বিয়ে করে এবং এরমধ্যে তাদের কোলজুড়ে জন্ম নেয় আবিদ হোসেন অথৈ নামের একটি ছেলে সন্তান। ওই বছরের ১৯ অক্টোবর বদলী হয়ে তারা উভয় খুলনায় চলে আসে এবং রূপসা উপজেলার পুটিমারী এলাকায় বাড়ি ভাড়া নেয়। সেখানে কিছুদিন থাকার পর উভয়ের মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মতবিরোধ দেখা দেয় এবং আরজুকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করতে থাকে। এ ঘটনার পর বাড়ির মালিক লিটন কুমার দেবনাথকে বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।

ওই বছরের ডিসেম্বর মাসে লিটন একই এলাকার নাদিরা বেগমের বাড়ি ভাড়া নেয়। সেখানে কিছুদিন শান্তু থাকার পর পুলিশ সদস্য আবারও স্ত্রীকে মারধর করে। এ ঘটনার পর আরজু পিতার বাড়িতে যাওয়ার কথা বলে এবং তাদের সম্পর্কের ব্যাপক অবনতি হয়। আরজু ছেড়ে চলে গেলে চাকুরীর ক্ষেত্রে ক্ষতি হতে পারে এই আশংকায় তাকে হত্যার পরিকল্পনা করতে থাকে লিটন।

পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২০ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারী রাতে আরজু আক্তারকে ধারালো অস্ত্রদিয়ে আঘাত করে হত্যা করে লিটন এবং ভেসে না ওঠে সেজন্য লোহার পাতসহ মরদেহ রূপসার আঠারো বেকী নদীতে ফেলে দেয়। হত্যার পর অপপ্রচার চালানো হয়, স্ত্রী বাচ্চা রেখে পালিয়ে গেছে।

এ ঘটনায় স্থানীয়রা বলতে থাকেন, সে স্ত্রীকে হত্যা করেছে। এমনকি এ ব্যাপারে সে আইনী কোন পদক্ষেপ না নেওয়ায় পুটিমারী পুলিশ ক্যাম্পের সদস্যরা তাকে সন্দেহ করতে থাকে। তাছাড়া নদী থেকে লাশ উদ্ধারের ছবি তাকে দেখালে এটি তার স্ত্রী না ব‌লে অস্বীকার করে। মরদেহের ছবি প্রতিবেশীদের দেখানো হলে তারা শনাক্ত করেন যে এটি আরজু আক্তারের। পরবর্তীতে আদালতের নির্দেশে মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন করা হয়। বিভিন্ন কার্য সম্পদন করে পুলিশ নিশ্চিত হয় এটি আরজুর লাশ। পরে আদালতের নির্দেশে পুলিশ সদস্য লিটনকে এস আই ফিরোজের দায়ের করা মামলায় ২০২০ সালের ১৫ নভেম্বর শিরোমনি আরআই অফিস থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এ ঘটনায় ২০২১ সালের ১১ নভেম্বর মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা খুলনা পিবিআইয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লুৎফর রহমান লিটন কুমারকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট প্রদান করেন।

খুলনা গেজেট/ টিএ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!